Hon's 3rd notes

নিরীক্ষকের কাজ- "পাহারাদার কুকুরের মত"" গোয়েন্দা কুকুরের মত নয়" মন্তব্যটি মজুদ পন্যের মূল্য নির্ধারন ও অস্তিত যাচাই সংক্রান্ত নিরিক্ষকের কর্তব্য সম্পর্কে "Kingston collon Mills Co. Ltd"(1896) মামলার রায় দানকালে বিচারপতি লোপস বলেছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কাজে নিযুক্ত নিরীক্ষক যুক্তিসঙ্গত যত্ন,নৈপণ্য ও সতর্কতার সঙ্গে তার কার্যসম্পাদন করবেন।

 এই মামলায় ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো, কোম্পানির ম্যানেজার বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কোম্পানির অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানির অবস্থা ভালো দেখানোর জন্য তিনি ইচ্ছা করেই হিসাবের বইতে মজুদ পন্যের মূল্য বেশি করে দেখাতেন এবং এ সম্পর্কে সার্টিফিকেট দিতেন। ম্যানেজার সকলেরই বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন বলে নিরীক্ষক মজুদ পণ্যের বই এবং ম্যানেজারের সার্টিফিকেট সত্য বলে গ্রহন করতেন, নিজে তা পরীক্ষা করতেন না। উদৃত্তপত্রে মজুদ পণ্যের মূল্য দেখানোর সময় ম্যানেজারের সার্টিফিকেট অনুসারে লেখা হত। এইরূপ নিয়মিত প্রতারণার ফলে কোম্পানির মূলধন থেকে মুনাফা/ লভ্যাংশ বন্টন করতে থাকে। ফলে কোম্পানির বিলোপসাধন ঘটে। পরবর্তীতে কোম্পানি অবসায়ন হলে অবসায়ক নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলার দায়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালত নিরীক্ষককে নির্দোষ ঘোষণা করেন এবং মহামান্য বিচারপতি বলেন, মজুদ পণ্য পরীক্ষা করা বা তার মূল্যায়ন করা নিরীক্ষকের কর্তব্য নয়, সন্দেহের কোনো কারণ না থাকলে কোম্পানির দায়িত্বশীল কোনো কর্মচারীর দেয়া সার্টিফিকেট নির্ভর করতে পারেন।

বস্তুতঃ মহামান্য বিচারপতি মামলা রায়ে পাহারাদার কুকুর এবং গোয়েন্দা কুকুর বলতে কি বুঝিয়েছেন তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। পাহারাদার কুকুর তার মালিক/ প্রভুর সম্পত্তি রক্ষার জন্য সদা সর্বদা সর্তক থাকে। পক্ষান্তরে, গোয়েন্দা কুকুরের কাজ গোয়েন্দাগিরি করা। কাউকেও বিশ্বাস না করে দোষী ব্যক্তিকে খুজে বের করাই তার প্রধান কাজ।

নিরীক্ষকের কাজ পাহারাদার কুকুরের মত। পাহারাদার কুকুরের মত নিরীক্ষকের কাজ হলো মালিকের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাকে সতর্কতা অবলম্বন করা । কিন্তু নিরীক্ষার সময় নিয়োগকর্তা বা মালিকের স্বার্থ বক্ষার জন্য তা গোয়েন্দাগিরি করতে হবে ইহা ঠিক নয়।  নিরীক্ষার জন্য সবসময় একটা অবিশ্বাসের মনোভাব নিয়ে নিরীক্ষক কাজ করবেন এবং দোষী ব্যক্তি খুঁজে বের করে তার শাস্তির বিধান করবেন এটি সমর্থনযোগ্য নয়।

হিসাব পরীক্ষা করার সময় প্রথম হতে সকল কর্মচারীকে অবিশ্বাস করতে আরম্ভ করলে নিরীক্ষককে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে এবং তিনি তার নিরীক্ষা কার্য সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না।
কারণ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে অবিশ্বাস করলে তাদের নিকট হতে নিরীক্ষা কার্যে কোনোরূপ সহযোগিতাও পাওয়া যাবে না। অথচ কর্মচারীদের সহযোগিতা ছাড়া নিরীক্ষা কার্য সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করাও কষ্টকর। এ কারণে নিরীক্ষকের এরূপ মনোভাব পরিত্যাগ করা বাঞ্চনীয়। কোম্পানি যেসব কর্মচারীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে নিরীক্ষকও সঙ্গত কারনে বিশ্বাস করতে পারেন। তবে সন্দেহ উদ্রেক করার মত কোনো কারণ থাকলে অর্থাৎ ভুল বা জুয়াচুরির ইঙ্গিত পেলে বিস্তারিত অনুসন্ধানের দ্বারা উহা উদঘাটনের চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে হিসাবের সত্যতা সম্পর্কে প্রত্যয়ন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।

পরিশেষে বলা যায়, নিরীক্ষার কাজ পরিচালনা করার সময় নিরীক্ষক তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে নৈপন্য দেখানোর চেষ্টা করবেন। যাতে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। তবে এর জন্য তিনি গোয়েন্দাগিরি করতে পারেন না।

Comments